শামসুল হুদা লিটন: কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের জনপ্রিয় ও ছাত্র নন্দিত অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম গত ১২ জুন দীর্ঘ ৩৫ বছরের শিক্ষকতা জীবন থেকে অনেকটা নীরবেই অবসরে চলে গেলেন। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এক অনন্য শিক্ষক।ছাত্র জীবনে ছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মেধাবী ছাত্র।
তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী:
জন্ম:তিনি ১৯৬৩ সালের ১৩ জুন কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের দিগধা গ্রামের প্রধান বাড়িতে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা: সাইফুল ইসলাম এর রয়েছে অসংখ্য বিদ্যালয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা। তিনি কিছু দিন দিগধা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করেন। পরে বিভিন্ন সময় মইশন মিয়া বাড়ি, ভুলেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
রাজশাহীর নাটোরে বসবাস: ১৯৭১ সালে তাঁর পরিবার রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলার সদর উপজেলার হালসা গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনিও পরিবারের সাথে সেখানে চলে যান। পরবর্তীতে তিনি নাটোরের হালসা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও লক্ষীপুর বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করেন।
মাধ্যমিক শিক্ষা: বিচিত্র তাঁর স্কুল জীবনে ইতিহাস। তিনি কাপাসিয়ার সরসপুর গ্রামে মামার বাড়িতে বেড়াতে আসার সুবাদে কিছু দিন ঈদগাহ উচ্চবিদ্যালয়ে লেখা পড়া করেন। পরবর্তীতে রাজশাহীর নাটোরের বরাইগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৮০ সালে মৌখাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করেন।
কলেজ জীবন: তিনি প্রথমে নওগা বিএনসি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরে ১৯৮২ সালে নাটোরের নবাব সিরাজুদ্দৌলা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন: তিনি ১৯৮৩ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অনার্স( সম্মান) ভর্তি হন। ১৯৮৫ সালে অনার্স ও ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্ম জীবন: ছাত্র জীবন শেষে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ব্র্যাকের শিক্ষা বিভাগে কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরি করেন। ১৯৮৯ - ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকায় একটি ইংলিশ মিডিয়াম কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৯৩ সালে শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত জন্মভূমি দিগধা গ্রামের দিগধা ফাজিল মাদরাসায় বাংলা বিভাগের
প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে কিছু দিন হাইলজোড় কলেজ বর্তমানে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপনা করেন। একই বছর ১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসে ভাওয়াল পরগণার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ থেকে ২০২৩। দীর্ঘ ২৯ বছর একই কলেজে শিকার আলো ছড়িয়েছেন এই শিক্ষানুরাগী শিক্ষা বীর। দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবত স্ব গৌরবে তিনি অধ্যাপনা করেছেন।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন: অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম অধ্যাপনার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি একজন উচুমানের লালন সংগীতের শিল্পী। বাংলা ব্যাকরণ ও বানান রীতির জটিল সব প্রশ্নের সহজ সমাধানে তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। শৈল্পিক আবৃত্তি, উপস্থাপনা,বক্তৃতা সহ সংস্কৃতির নানা শাখায় তাঁর রয়েছে প্রশংসিত বিচরণ। বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের দাবী আদায়ের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম এর ভূমিকা ছিলো চোখে পড়ার মতো। চা খানায়, চায়ের টেবিলে, নৌবিহারে, ভ্রমণে তাঁর আনন্দমূলক কথার ফুলঝুরি সহকর্মীদের জীবনের অনন্য স্মারক হয়ে থাকবে। কাপাসিয়ার প্রতি তাঁর হৃদয়ের গভীর টান ও ভালোবাসা অমর হয়ে থাকবে। একজন সফল শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের মাঝে তাঁর প্রভাব ছাত্র পরম্পরায় অনন্তকাল ব্যাপী হেরার গুহার জ্ঞানের আলোর ঝলক হয়ে বেঁচে থাকবে। অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম আমার মতো অসংখ্য মানুষের সুহৃদ ও আপনজন। তাঁর সাথে আমার স্মৃতি অনেক। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন পন্ডিত ব্যক্তিত্ব। তাঁকে যে চিনেছে, তাঁকে যে বুঝেছে সে তাঁর কাছ থেকে বাংলা বিভাগের অলিগলিতে হাঁটার কিছুটা হলেও সৌভাগ্য অর্জন করেছে। কোন খেয়ালের ভুলে হয়তো আমরা অনেক কিছুই ভুলে যাই। হয়তো ভুলে যাবো। আমার অধ্যাপক সাইফুল মামুকে কাপাসিয়াবাসী মনে রাখবে একজন শিক্ষক হিসেবে এবং কাপাসিয়ার প্রতি তাঁর হৃদয়ের টানের জন্যে, শিকড় সন্ধানী মানুষ হিসেবে। আমি তাঁর অবসর জীবনে সুস্থতা ও সফলতা কামনা করছি। আমীন।
শামসুল হুদা লিটন
সহকারী অধ্যাপক
রাষ্ট্রবিজ্ঞান
তারাগঞ্জ কলেজ