আজ দুর্ভাগ্য, কাল সৌভাগ্য

একটি গ্রামে একজন বৃদ্ধ কৃষক বাস করতেন। তার একটি তেজি ঘোড়া ছিল। তিনি সেই ঘোড়াটি দিয়ে কৃষিকাজ করতেন, ভারী জিনিস বহন করতেন এবং প্রতিদিন যাতায়াতেও ব্যবহার করতেন।

আজ দুর্ভাগ্য, কাল সৌভাগ্য

১) ঘোড়া হারিয়ে যাওয়া
একদিন হঠাৎ ঘোড়াটি হারিয়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও কোথাও পাওয়া গেল না।
কৃষকের স্ত্রী খুব কষ্ট পেলেন। কিন্তু কৃষক একদমই চিন্তিত নয়। যেন কিছুই হয়নি।
প্রতিবেশীরা এসে বলল, “তোমার তো অনেক দুর্ভাগ্য! একটিই ঘোড়া ছিল, সেটাও হারিয়ে গেল!”
কৃষক হালকা হেসে বলল, “হতে পারে!”

২) ঘোড়া ফিরে এলো, সাথে আরও তিনটি
কয়েকদিন পর সেই হারানো ঘোড়াটি নিজে নিজেই ফিরে এল। আর অবাক করার মতো ঘটনা – তার সাথে আরও তিনটি বন্য ঘোড়া এসেছে।
এটা দেখে সবাই অবাক ও আনন্দিত।
প্রতিবেশীরা এসে বলল, “তোমার তো এবার বড়ই সৌভাগ্য! শুধু হারানো ঘোড়াটি নয়, আরও তিনটি নতুন ঘোড়া পেলে!”
কৃষক আবারও শান্তভাবে বলল, “হতে পারে!”

৩) ছেলের দুর্ঘটনা
দুদিন পর কৃষকের একমাত্র ছেলে নতুন ঘোড়াগুলোর একটি চড়তে গিয়ে নিচে পড়ে যায়। এতে তার পা ভেঙে যায়।
প্রতিবেশীরা দুঃখ প্রকাশ করে বলল, “এত সুন্দর সময়ে ছেলের পা ভেঙে গেল! সত্যিই খুব দুর্ভাগ্য!”
কৃষক আবার হেসে বলল, “হতে পারে!”

৪) যুদ্ধে না যাওয়া
পরদিন রাজ্যের সৈন্যরা গ্রামে এসে হাজির। তারা যুদ্ধের জন্য সব যুবক ছেলেকে নিয়ে যেতে এসেছে।
তারা কৃষকের বাড়িতেও এসে ছেলেকে নিতে চাইল। কিন্তু তার পা ভাঙা দেখে তাকে রেখে চলে গেল।
প্রতিবেশীরা বলল, “তোমার তো অনেক সৌভাগ্য! তোমার ছেলে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে না, প্রাণে বেঁচে যাবে।”
কৃষক একইভাবে মুচকি হেসে বলল, “হতে পারে!”

৫) শিক্ষণীয় বিষয়:

জীবনের ভালো-মন্দ একেবারেই স্থায়ী নয়।
যা আজ খারাপ মনে হচ্ছে, কাল সেটা ভালো কিছুতে পরিণত হতে পারে – আবার ভালো জিনিসও খারাপ হয়ে যেতে পারে।
সবকিছুরই একটা কারণ ও পরিণতি থাকে, যা সময়ের সাথে বোঝা যায়।
আজকের ‘অসুবিধা’ হয়তো আগামীকালের ‘সুবিধা’।
জ্ঞানী মানুষ কষ্টে ভেঙে পড়েন না, আনন্দে উত্তেজিত হন না।
তারা সবকিছু শান্তভাবে মেনে নেন এবং পরিস্থিতির উপর ভরসা রাখেন।
সব কিছু আপেক্ষিক – এক সময়ের বিচারেই সত্য বোঝা যায় না।
বর্তমান যা দেখাচ্ছে, ভবিষ্যতে তার মানে একেবারেই বদলে যেতে পারে।
জীবনে ভালো-মন্দ মিলিয়েই চলতে হয়।
পরিবর্তনকে সহজভাবে মেনে নিতে পারলে মানসিক শান্তি ও স্থিরতা বজায় থাকে।

৬) মূল বার্তা:
জীবনের প্রতি ঘটনার প্রতি ধৈর্য ও গ্রহণযোগ্য মনোভাব রাখো। আজকের ঘটনাই চূড়ান্ত নয়। "হতে পারে!" – এই ভাবনাই জীবনে সত্যিকার শান্তি এনে দেয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post