সুসাংবাদিক সত্যের সন্ধানে সমাজের দর্পণ অগ্রগতির দিশারী ।

দুঃখ, হতাশা আর দীর্ঘশ্বাস—এই শব্দগুলো যেন আমাদের গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থার প্রতিচ্ছবি। একসময় যে গণমাধ্যম ছিল রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, জনগণের কণ্ঠস্বর, আজ তা যেন কর্পোরেট স্বার্থের শেকলে বন্দি। সাংবাদিকতা, যা ছিল এক মহান ব্রত, আজ যেন একদল ‘কর্পোরেট দাসে’র হাতের খেলনা।

গণমাধ্যম, এই শব্দটার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের ইতিহাস, আমাদের মুক্তি সংগ্রামের কথা। রাষ্ট্রের জন্মের সূচনালগ্নে গণমাধ্যম ছিল সক্রিয়, নির্ভীক। কিন্তু মাতৃকোলেই ১৯৭৪ সালে আঘাতপ্রাপ্ত হয় আমাদের গণমাধ্যম। এরপর বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গণমাধ্যম এগিয়েছে বটে, কিন্তু হারিয়েছে তার নিজস্বতা, স্বাধীনতা।

রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা এসেছে, আবার বাধাও এসেছে ঢের। আইন আর আইনি মারপ্যাঁচে যখন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে, তখন আমরা নীরব দর্শক হয়ে দেখেছি। কিন্তু আজ এই আস্থার সংকটের জন্য কেবল রাষ্ট্রযন্ত্রই দায়ী নয়। দায় আছে একদল সাংবাদিকের, যারা অবলীলায় বরণ করেছেন ‘কর্পোরেট দাসত্ব’। নিজেদের স্বার্থে তারা যেন চোখ বুজেছেন, যখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূর্য ম্লান হচ্ছিল।

তবে আঁধারের মাঝেও কিছু আলোর রেখা ছিল। হাতেগোনা কিছু গণমাধ্যমকর্মী স্বাধীন সাংবাদিকতার ব্রত নিয়ে লড়ে গেছেন নিরন্তর। চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা টিকে ছিলেন, হয়েছেন নীলকণ্ঠী। কিন্তু তাদের এই লড়াকু তৎপরতাও বৃহৎ পরিসরে গণমাধ্যমকে বাঁচাতে পারেনি পাঠকের, দর্শক, শ্রোতার আস্থার সংকট থেকে।

গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ যখন বণিক শ্রেণি বা কর্পোরেটের হাতে চলে যায়, তখন তারা গণমাধ্যমকে নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের দায়িত্ব পালনের চেয়ে কর্পোরেট মালিকের স্বার্থ রক্ষা তখন সাংবাদিকদের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে। এতে গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাধীনতার সূর্য মেঘে ঢাকা পড়ে যায়।

রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের ভিত নড়ে গেছে। এর কারণ সবাই জানে, কিন্তু কারোই যেন কিছু করার নেই। বেশিরভাগ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানই কর্পোরেট মালিকানাধীন। তাই চাইলেও হুট করে গণমাধ্যম কর্পোরেটমুক্ত হতে পারে না।

আমার নিজের কথাই বলি। দীর্ঘকাল কর্পোরেট মালিকানাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি—আসলে বলতে গেলে ‘দাসত্ব’ করেছি। কিন্তু দিনের পর দিন মনে হয়েছে, এই দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙা জরুরি। আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, বাংলাদেশে বেশিরভাগ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে কৌশলে কর্পোরেট সাম্রাজ্য রক্ষার প্রহরী বানানো হয়েছে।

এই বোধোদয়ের পর আমি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন পত্রিকার চাকরি থেকে ইস্তফা দিই। কিন্তু স্বাধীন সাংবাদিকতার নেশা আমাকে ছাড়ে না। এ যেন এক মরণনেশা! এই নেশাই আমাকে নিয়ে গেল কর্পোরেটমুক্ত, সুসাংবাদিকদের মালিকানায় ‘অণুসম’ একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রস্তুতির দিকে।

আমার মস্তিষ্কে স্বপ্নজাল বুনেছিলাম—অণুসম প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিকরা হবেন স্বাধীন, কেউই ‘চাকর’ হবেন না। কোনো আর্থিক বিনিয়োগ লাগবে না, শুধু সুসাংবাদিক হলেই চলবে। সুসাংবাদিকরা মেধা, শ্রম ও যোগ্যতাবলে প্রতিষ্ঠানটিকে নিজেদের করে গড়ে তুলবেন। কারো স্বার্থে সংবাদ লিখবেন না, প্রকাশ করবেন না। আবার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ যত বড় অপশক্তির বিরুদ্ধেই হোক—লিখতে অণুপরিমাণ ভয়ও পাবেন না। এমন ‘বুলেটপ্রুফ’ সংবাদ তৈরি করবেন, যা প্রকাশিত হবে—এমন নিশ্চয়তা থাকবে শতভাগ। কোনো অপশক্তির ভয়ে সংবাদ লেখা বা প্রকাশ বন্ধ হবে না, কোনো অপশক্তির স্বার্থ বিবেচনা করা হবে না। আবার রাষ্ট্রীয় স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটি থাকবে সদা জাগ্রত। কণাসম আপোষও হবে না রাষ্ট্রীয় স্বার্থের প্রশ্নে।

কাপাসিয়া বার্তা'র মূল লক্ষ্যই হলো সুসাংবাদিকতা। সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে যারা ‘স্বাধীন সাংবাদিকতার স্বাদ’ পেতে আগ্রহী, তাদেরই হবে এই প্রতিষ্ঠানটি। এটি একটি কর্পোরেট বিনিয়োগহীন প্রতিষ্ঠান।

আমাদের বিশ্বাস, একদল সুসাংবাদিক যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামেন, তাহলে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব। দাসত্বমুক্ত স্বাধীন সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠান কাপাসিয়া বার্তা'র মাধ্যমে সুসাংবাদিকতার কেতন এই দেশে উড়বেই।

সেই বিশ্বাস নিয়েই বলছি, আপনি যদি সুসাংবাদিক হন, যদি সুসাংবাদিকতার হাল ধরতে চান—তাহলে আজই আসতে পারেন কাপাসিয়া বার্তায়।

আপনার কলমের শক্তি দিয়েই আমরা গড়ে তুলব এক নতুন ইতিহাস। আর দেরি নয়, এখনই যুক্ত হন আমাদের সাথে।

হাজী সাইফুল ইসলাম
সম্পাদক ও প্রকাশক
কাপাসিয়া বার্তা

Post a Comment

Previous Post Next Post